: চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী মো. নুরনবী ওরফে ম্যাক্সন ভারতে মারা গেছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১২.০৬ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর এলাকায় তার সঙ্গিনী অর্পিতা হাজরার সঙ্গে থাকতেন ম্যাক্সন ওরফে তমাল চৌধুরী। তবে তারা বিবাহিত নন। হাসপাতালে মৃতদেহ আনার সময় অর্পিতা সঙ্গে ছিলেন। তবে হাসপাতালে লাশ রেখে তিনি নিরুদ্দেশ হন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
অর্পিতার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অর্পিতা রাতে বাসায় ফিরে সদর দরজা বন্ধ থাকায় দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করেন। দরজা না খোলায় তিনি প্রতিবেশীর সাহায্যে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ম্যাক্সনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির অধিকারী জানান, তমাল চৌধুরী নামে খাতায় মৃতদেহ এন্ট্রি করা আছে। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন ম্যাক্সন। পশ্চিমবঙ্গে তমাল চৌধুরী নামে বসবাস করে আসছিলেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাক্সন। বসিহাটের একটি মাছের ভেড়িতে কাজ করতেন তিনি। প্রথমে উত্তর২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে বাসা ভাড়া নেন। পরে জানাজানি হতে, স্থান পরিবর্তন করে ওই জেলার বারানগর থানার ডানলপ এলাকায় ৭ হাজার রুপিতে বাসা ভাড়া নেন ম্যাক্সন। ডানলপ থেকেই সিআইড তাকে গ্রেফতার করে। ব্যারাকপুর কোর্টে মামলাটি উঠলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় তদন্তকারী সংস্থাটি। পরে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয় তাকে। পরে তথ্য না পেয়ে তাকে জামিন দেওয়া হয়। বরানগরে থাকাকালে প্রেম হয় অর্পিতার সঙ্গে। জামিন পাওয়ার পর অর্পিতার সঙ্গে চলে আসেন হরিদেবপুরে। এরপর মঙ্গলবার রাতে তার রহস্যজনক মৃত্যু হলো।
ম্যাক্সন চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার জাহানপুর এলাকার বাসিন্দা। জানা যায়, পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও নিচ্ছিল। ২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সন এবং চট্টগ্রাম থেকে সারোয়ার ও আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়েও সারোয়ার ও ম্যাক্সন তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। চাঁদাবাজিসহ বহু অসামাজিক কাজের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন তারা।
২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জামিনে বের হয়ে কাতার চলে যান ম্যাক্সন ও তার সহযোগী সারোয়ার। চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে তারা মানিকজোড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কাতারে বসেই নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন এই মানিকজোড়। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে বাংলাদেশে ফিরে গেলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হন সারোয়ার। সেখান থেকে ভারতে পাড়ি দিয়েছিলেন ম্যাক্সন।
Leave a Reply