ঢাকার মিটফোর্ডে ওষুধের ছোট একটি দোকান রয়েছে ৪৭ বছর বয়সী ইমাম হোসেনের। এ দোকানের আয়ে চলে মা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার।
তিন বছর আগে ইমামের ইচ্ছা জাগে হজে যাওয়ার। ৩২ হাজার টাকা দিয়ে করেন প্রাক-নিবন্ধন। শুরু করেন টাকা জমানো। সাড়ে চার লাখ জমেছে; ভেবেছিলেন আর লাখ খানেক টাকা খরচ করে এবার যাবেন সৌদি আরব।
কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হজের যে প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে, তা দেখে আক্কেল গুড়ুম তার। গতবারের চেয়ে খরচ পড়বে অনেকটাই বেশি এবং এই বাড়তি টাকা জোগাড় করাটা তার জন্য বেশ সমস্যা সংকুল হয়ে যায়।
ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোট দোকান, একবারে তো আর চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিতে পারব না। তাই পরিকল্পনা করে ২০২৩ সালে হজে যেতে টাকা জমাতে শুরু করেছিলাম।গত বছর ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা দিয়ে হজে যাওয়া গিয়েছে তাই ভেবেছি এক বছর বাড়লে আর কত বাড়বে বড়জোর ৫০ হাজার টাকা কিন্তু বাড়ল প্রায় দুই লাখ টাকা।
“তিন লাখ টাকা ছোট্ট দোকান থেকে ‘টান’ দিলে দোকানের আর কিছুই থাকবে না-ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।”
চলতি মৌসুমে সরকারি প্যাকেজে খরচ পড়বে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। আগের বছর প্যাকেজ ছিল দুটি। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর খরচ ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা আর প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্যাকেজ থাকছে একটিই। গতবারের প্যাকেজ-১ এর তুলনায় এবার বেশি পড়বে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। প্যাকেজ-এর তুলনায় খরচ বেশি হবে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজে যেতে মাথাপিছু খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। কোরবানির খরচ হাবের এই প্যাকেজের মধ্যে ধরা হয়নি। কোরবানি বাবদ অর্থ প্রত্যেক হজযাত্রীকে আলাদাভাবে সঙ্গে নিতে হবে।
গত বছর বেসরকারিভাবে হজের খরচ পড়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। সেই হিসাবে এ বছর খরচ বাড়ছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তার সঙ্গে কোরবানির টাকা মিলিয়ে বাড়তি অঙ্কটা দুই লাখ ছুঁয়ে ফেলবে।
চাঁদপুর কচুয়া উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহ আলমও হজ প্যাকেজের টাকার অঙ্কের কথা জেনে খুব অবাক হয়েছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত টাকা বাড়বে! এখন তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। কীভাবে যাব? এত খরচ…
“এখন হজ বড় লোকদের জন্য, সবাই করতে পারবেন না। ছোট বেলায় কেউ হজ করতে আসলে সবাই তাকে দেখতে যেত। এখনও সেই পর্যায়ে যাচ্ছে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে মানুষের হিসাবে একটু ভুল হচ্ছে। ২০২২ সালে সরকার তড়িঘড়ি করে প্যাকেজ ঘোষণা করে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। কিন্তু পরে সৌদি সরকার আরও চার্জ ধরায় ৫৯ হাজার টাকা খরচের সঙ্গে বেড়ে প্যাকেজ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০টাকা। সেই হিসেব ধরলে এ বছর এক লাখের মতো খরচ বেড়েছে।”
Leave a Reply