ঢাকা: পাওয়া-না পাওয়ার স্মৃতি-বিস্মৃতির একটি বছর শেষে নতুন বছরের শুরুর দিন আজ। চোখের সামনে এসে দাঁড়ায় ধূসর হয়ে আসা গল্পগাঁথার সারি সারি চিত্রপট।কখনো বুকের ভেতর উঁকি দেয় ব্যক্তি মানুষের একান্তই দুঃখ-যাতনা। কখনো পাওয়ার আনন্দে নেচে ওঠে হৃদয়। রাষ্ট্র, সমাজ, গোষ্ঠী কত পালাবদল কত পূর্ণ না হওয়া স্বপ্নসাধ ডানা মেলে আকাশে। ভুলতে বসা কত স্মৃতি নতুন করে উঁকি দেয় মনে। জেগে ওঠে পুরনো বছরের কত পুরোনো দৃশ্য। সামনে এসে নিঃশব্দে দাঁড়ায় স্মৃতি-বিস্মৃতির কত আড়াল। বিদায়ী বছরের সঙ্গে সঙ্গে বিগত দিনের দুঃখ বেদনা ভুলে নতুন দিনে নতুন করে সব শুরু করার তাগিদে মেতে উঠে দেশবাসী।
দূরে থাকার, বিচ্ছিন্নতার, আতঙ্কের, মহামারির উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে একটি বছর গেল। জড়তা, ভয়কে পাশে ঠেলে আবার জাগছে মানুষ নতুন স্বাভাবিকতায়। নতুন সূর্য উঁকি দিচ্ছে পুরাতনের গ্লানি ভুলে।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিলো আরেকটি খ্রিস্ট্রিয় বছর। ২০২২ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে গেছে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরিয়ে শুরু নতুন খ্রিস্ট্রিয় বছর ২০২৩। শুভ নববর্ষ (হ্যাপি নিউ ইয়ার)!
আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিস্ট্রিয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন সবাই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে বিদায়ী এই বছরটি।
আমাদের ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় জীবনেও বিদায়ী বছরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ছিল করোনার প্রভাব। তাই এটা বলাই যায় যে, বছরটা খুব একটা ভালো কাটেনি। তারপরও রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২২ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের ঘটনা। হঠাৎ করেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় থমকে দাঁড়ায় গোটা বিশ্ব। বিশ্বের বাইরে না বাংলাদেশও। কিছুটা প্রভাব তো পড়েছেই। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অর্থনীতির চাপ সচল রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে।
বিদায়ী বছরে দাগ কেটেছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, অনেক দেশে দুর্ভিক্ষের হাতছানি, ব্রিটেন-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ঘটনা। প্রত্যাশা থাকবে প্রাপ্তিগুলো নতুন মোড়কে নতুনভাবে প্রেরণা জোগাবে ২০২৩-এ। হতাশ-গ্লানিগুলো যাবে ঘুচে। বছর শেষ হওয়ার পথে সবাই নতুন আলো ও সম্ভাবনার আশায় বসে আছে। তাই নতুন বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের একটি মাত্রই চাওয়া- ‘বিশ্ব হোক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মুক্ত, বন্ধ হোক যুদ্ধ, প্রাণঘাতী, হানাহানি। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, ভয়হীন প্রাণভরে নিশ্বাস নিক বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। ’ তাই বিদায় ২০২২, স্বাগত ২০২৩ সাল।
নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী হয়ে হালখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। তবে বৈশ্বিক এই সংকটে যখন বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলোও বিপর্যস্ত, তখনো বর্তমান সরকারের অসামান্য কৃতিত্বে দেশের অর্থনীতির চাকাকে শুধু সচল রাখাই নয়, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, দেশের মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পাশাপাশি বড় মেগা প্রকল্পগুলো সফল বাস্তবায়ন গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সারাবিশ্বের সামনে বাংলাদেশ আবারও তার নিজস্ব সক্ষমতার জানান দিয়েছে। সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়ন-সাফল্যের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ এক বিস্ময়ের নাম। সাফল্যের মুকুটে একের পর এক যোগ হয়েছে অনেক অগ্রগতির পালক।
হিসেবের খেরোখাতায় জমে আছে অনেক বিয়োগ-ব্যথা, হারানোর কান্না, নানা গ্লানি আর মালিন্যের দাগ। বছরজুড়ে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় আমাদের মন ভীষণ ভারাক্রান্ত, তবু নিরাশার গভীর থেকে ফুঠে ওঠে বিপুল আশার আলো, ধ্বংসস্তূপ থেকে ফোটে নবতর জীবনের ফুল। আমরা আবারও মেতে উঠি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, বৈরী সময়কে মারিয়ে হেসে গেয়ে উঠি জীবনের জয়গান।
রাত পোহালেই কাল পূর্বকাশে উঠবে যে নতুন সূর্য- সে সূর্য নতুন বছরের। নতুন আশায় বুক বেঁধে আরও একটি নতুন বছরের দিনলিপি পড়ে থাকবে পেছনে। নতুন বছরে নতুন সূর্যের অসীম প্রতীক্ষা মানুষের। গত দুই বছরের উৎসব করতে না পারলেও এবার মুক্তির প্রত্যাশায় শান্তির বার্তা নিয়েই এবার মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩ সালকে। স্বাগত ২০২৩, বিদায় ২০২২।
Leave a Reply