নরসিংদীতে এসপির নির্দেশে ১৫০০ অপরাধী গ্রেপ্তার, ফিরেছে শান্তির ছায়া
নরসিংদী জেলার আইন-শৃঙ্খলায় বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। পুলিশের টানা এক মাসের ধারাবাহিক ও সুপরিকল্পিত অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি অপরাধী। হত্যা, ছিনতাই, মাদক, ইভটিজিং থেকে শুরু করে বাল্যবিবাহ—কোনো অপরাধই রেহাই পায়নি পুলিশের টার্গেট থেকে।
অপারেশনে নেতৃত্বে আছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম। তার কৌশলী নির্দেশনা, তৃণমূল পর্যায়ে কঠোর নজরদারি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা—সব মিলিয়ে নরসিংদী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ, অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত।
নরসিংদীর আলোচিত ও সংঘাতপ্রবণ এলাকা আলোকবালি ইউনিয়ন—যেখানে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক সহিংসতায় রক্তাক্ত হয়েছিল জনপদ, সেখানে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃঢ় অবস্থান দেখিয়েছে পুলিশ।
একসময় পরিবারসহ পালিয়ে থাকা বিএনপির প্রায় ৩০০ পরিবারকে নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে নিজ ঘরে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং প্রতিটি মোড়ে মোড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এখন এলাকাজুড়ে শান্তির ছায়া।
স্থানীয় মুদি দোকানি কাওসার মিয়া বলেন,“আগে সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে দিতাম। এখন রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করি। পুলিশ রাস্তায়, মানুষ নির্ভয়ে চলছে। এমন শান্তি অনেকদিন পর দেখছি।”
এক নারী স্কুলশিক্ষক হেনা আক্তার জানান,“মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকতাম। এখন মনে হয়, সমাজে আবার নিয়মকানুন ফিরে আসছে। মেয়েরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারছে।”
একজন ভ্যানচালক জানান, “আগে মোবাইল হাতে থাকলে ছিনতাইকারী নিয়ে যাইতো। এখন পুলিশ এমন চেক করে, ছিনতাইকারী রাস্তায় দেখা যায় না।”
নরসিংদী মহিলা কলেজের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, “এই ধরনের অভিযান শুধু অপরাধ দমন করে না, সমাজে একটি বার্তা দেয়—অপরাধ করলে ছাড় নেই। পুলিশ যেভাবে জনসম্পৃক্তভাবে কাজ করছে, তাতে তরুণ প্রজন্মও অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এমন একটি অভিযানের মধ্যে দিয়ে পুরো জেলার মনোবল বদলে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ যদি এই ধারা ধরে রাখে এবং জনগণের সঙ্গে আস্থা ও অংশীদারিত্ব বজায় রাখে, তাহলে নরসিংদী হয়ে উঠতে পারে নিরাপদ শহরের রোল মডেল।”
আলোকবালীর স্থানীয় এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একটা সময় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ভীতিকর অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু এবার যে পরিবারগুলো বাড়িছাড়া ছিল, পুলিশ নিজে তাদের ফেরত এনেছে। এটা ইতিবাচক ইঙ্গিত। অপরাধীর কোনো দল হয় না। পুলিশ এখন যেভাবে কাজ করছে, তাতে সব পক্ষই স্বস্তিতে আছে। দলমত নির্বিশেষে এলাকায় শান্তি চাই।”
জেলা পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন,”অপরাধী যে-ই হোক, সে ছাড় পাবে না। আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখি না, দেখি অপরাধ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।”
তিনি আরও জানান, “নরসিংদীর প্রতিটি থানা এখন টার্গেটভিত্তিক কাজ করছে। প্রতিটি অপরাধ প্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নতুন একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই পুলিশের সহায়তা পায়।”