ঢাকা ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীতে টনসিল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, দুই চিকিৎসক আটক

সূত্র- নরসিংদীর কন্ঠস্বর

নরসিংদীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় রাহা মনি (৬) বছরের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে পৌর শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড় এলাকার লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রাহা মনি রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙা এলাকার বাসিন্দা নিজামুল হক ও তানিয়া আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাহা মনি একমাস ধরে গলায় টনসিলের সমস্যায় ভোগছেন। স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাক-কান-গলার চিকিৎসক ডা. তন্ময় কর চিকিৎসা পত্রে ঔষধ খেয়েও ভালো হচ্ছিলো না। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডা. তন্ময় করের কাছে রাহা মনিকে নিয়ে গেলে তিনি অপারেশনের কথা বলেন। পরে ডাক্তারের পরামর্শে টনসিল অপারেশনের জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাহা মনিকে।

রাতে অপারেশনের সময় এনেস্থেশিয়া দেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুদীপ্ত সাহা এবং অপারেশন করেন নাক-কান-গলার চিকিৎসক ডা. তন্ময় কর। কিন্তু অপারেশনের প্রায় এক ঘণ্টা পরই মারা যায় রাহা মনি। পরিবারের দাবি ভূল চিকিৎসায় তাদের একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন।

এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে দুই চিকিৎসককে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং দুই চিকিৎসককে হেফাজতে নিয়ে নরসিংদী মডেল থানায় নিয়ে যায়।

শিশুটির বাবা নিজামুল হক বলেন, অপারেশন করার পর আমাদেরকে বলছে ১৫ মিনিট পর জ্ঞান ফিরবে অনেক সময় পার হলেও মেয়ের জ্ঞান ফিরছেনা। পরে ডাক্তারকে ফোন দিলে ডাক্তার এসে আমার মেয়েকে আবার ওটিতে নিছে, আমি বার বার যাওার চেষ্টা করলেও আমাকে যাইতে দেয়নি তারা। অনেকক্ষণ পর আমি জোর করে ওটিতে গিয়ে আমার মেয়ের পায়ে হাত দিয়ে দেখি পা ঠান্ডা, তখনি আমি বুঝতে পারি আমার মেয়ে নাই। আমার মরা মেয়েকে ঢাকায় নিতে হবে, আইসিউতে রাখতে হবে বলে আমাদের সাথে তারা ছলচাতুরি করে। আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলেছে।

লাইফ কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ফজলুল কাদের বলেন, অপারেশন করার পর বেডে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরে তাকে আবার ডাক্তাররা চিকিৎসা দেয়। শিশুটিকে ঢাকার জন্য রেফার্ড করা হয়েছিলো। এরমধ্যেই মারা যায়।

শিশুটির অপারেশনে সহায়তাকারী এনেস্থোলজিস্ট ডা. সুদীপ্ত সাহা বলেন, ৭টার দিকে শিশুটির টনসিলের অপারেশন সফলভাবে শেষ হওয়ার পর সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটিকে বেডে দেওয়া হয়। পরে আমরা অপারেশন থিয়েটার থেকে চলে যাই। সাড়ে ৮টার দিকে নার্স ফোন দেয় বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছে না এবং কালো হয়ে যাচ্ছে। পরে সাথে সাথে আমরা হাসপাতালে এসে বাচ্চাটিকে জীবন রক্ষাকারী সকল ওষুধপত্র দেওয়া হয়। ডাক্তার হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে বাচ্চাটির জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি । এনাস্তেশিয়া, অপারেশন সবকিছুই সফলভাবে করা হয়েছিল তাতে কোন গাফিলতি ছিলো না।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: এমদাদুল হক বলেন, লাইফ কেয়ার হাসপাতালে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে এসে দুই ডাক্তারকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আর মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ০৪:১১:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
৫৩ বার পড়া হয়েছে

নরসিংদীতে টনসিল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, দুই চিকিৎসক আটক

আপডেট সময় ০৪:১১:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

নরসিংদীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় রাহা মনি (৬) বছরের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে পৌর শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড় এলাকার লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রাহা মনি রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙা এলাকার বাসিন্দা নিজামুল হক ও তানিয়া আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাহা মনি একমাস ধরে গলায় টনসিলের সমস্যায় ভোগছেন। স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাক-কান-গলার চিকিৎসক ডা. তন্ময় কর চিকিৎসা পত্রে ঔষধ খেয়েও ভালো হচ্ছিলো না। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডা. তন্ময় করের কাছে রাহা মনিকে নিয়ে গেলে তিনি অপারেশনের কথা বলেন। পরে ডাক্তারের পরামর্শে টনসিল অপারেশনের জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাহা মনিকে।

রাতে অপারেশনের সময় এনেস্থেশিয়া দেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুদীপ্ত সাহা এবং অপারেশন করেন নাক-কান-গলার চিকিৎসক ডা. তন্ময় কর। কিন্তু অপারেশনের প্রায় এক ঘণ্টা পরই মারা যায় রাহা মনি। পরিবারের দাবি ভূল চিকিৎসায় তাদের একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন।

এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে দুই চিকিৎসককে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং দুই চিকিৎসককে হেফাজতে নিয়ে নরসিংদী মডেল থানায় নিয়ে যায়।

শিশুটির বাবা নিজামুল হক বলেন, অপারেশন করার পর আমাদেরকে বলছে ১৫ মিনিট পর জ্ঞান ফিরবে অনেক সময় পার হলেও মেয়ের জ্ঞান ফিরছেনা। পরে ডাক্তারকে ফোন দিলে ডাক্তার এসে আমার মেয়েকে আবার ওটিতে নিছে, আমি বার বার যাওার চেষ্টা করলেও আমাকে যাইতে দেয়নি তারা। অনেকক্ষণ পর আমি জোর করে ওটিতে গিয়ে আমার মেয়ের পায়ে হাত দিয়ে দেখি পা ঠান্ডা, তখনি আমি বুঝতে পারি আমার মেয়ে নাই। আমার মরা মেয়েকে ঢাকায় নিতে হবে, আইসিউতে রাখতে হবে বলে আমাদের সাথে তারা ছলচাতুরি করে। আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলেছে।

লাইফ কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ফজলুল কাদের বলেন, অপারেশন করার পর বেডে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরে তাকে আবার ডাক্তাররা চিকিৎসা দেয়। শিশুটিকে ঢাকার জন্য রেফার্ড করা হয়েছিলো। এরমধ্যেই মারা যায়।

শিশুটির অপারেশনে সহায়তাকারী এনেস্থোলজিস্ট ডা. সুদীপ্ত সাহা বলেন, ৭টার দিকে শিশুটির টনসিলের অপারেশন সফলভাবে শেষ হওয়ার পর সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটিকে বেডে দেওয়া হয়। পরে আমরা অপারেশন থিয়েটার থেকে চলে যাই। সাড়ে ৮টার দিকে নার্স ফোন দেয় বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছে না এবং কালো হয়ে যাচ্ছে। পরে সাথে সাথে আমরা হাসপাতালে এসে বাচ্চাটিকে জীবন রক্ষাকারী সকল ওষুধপত্র দেওয়া হয়। ডাক্তার হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে বাচ্চাটির জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি । এনাস্তেশিয়া, অপারেশন সবকিছুই সফলভাবে করা হয়েছিল তাতে কোন গাফিলতি ছিলো না।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: এমদাদুল হক বলেন, লাইফ কেয়ার হাসপাতালে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে এসে দুই ডাক্তারকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আর মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।