ঢাকা ০৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারকেল গাছের রস থেকে হবে কোকোনাট সুগার বা নারকেল চিনি

ফেসবুক রিপোর্ট
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াতে নারিকেল চিনি (কোকোনাট পাম সুগার) একটি জনপ্রিয় মিষ্টিকারক উপাদান। এই অঞ্চলের অনেক জায়গায় নারকেল গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। সেখানকার মানুষরা ঐতিহ্যগতভাবে নারকেল গাছের রস (Coco sap) থেকে কোকোনাট সুগার তৈরি করে থাকে।
নারিকেল গাছ প্রতি মাসে ফুল উৎপন্ন করে। শ্রমিকরা গাছে উঠে অপরিণত ফুল কেটে দেয় এবং সেই স্থান থেকে বের হওয়া রস বাঁশ বা প্লাস্টিকের পাত্রে ৮-১২ ঘণ্টা ধরে সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রায় ১.৫ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রসকে উত্তাপে শুকানো হয়। ফলাফল হিসেবে এক ধরনের বাদামি দানাদার চিনি পাওয়া যায়, যা দেখতে অনেকটা কাঁচা আখের চিনির মতো।
১০০ গ্রাম কাঁচা নারিকেল রসে প্রায় ১৫ গ্রাম চিনি থাকে। নারিকেল গাছ অল্প বয়সেই রস সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে এবং এটি ২০ বছর পর্যন্ত এই কাজে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে, কোকোনাট সুগার পশ্চিমা দেশগুলিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ চিনি কোনো পুষ্টিগুণ রাখে না, শুধু খালি ক্যালোরি সরবরাহ করে। কিন্তু কোকোনাট সুগার কিছু পরিমাণ পুষ্টি উপাদান ধরে রাখে, যেমন: আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। কোকোনাট সুগারে কিছুটা খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তবে এটি এত বেশি নয় যে বড় কোনো উপকার পাওয়া যাবে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) হলো এক ধরনের স্কেল যা পরিমাপ করে কোনো খাবার কত দ্রুত রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করে। সাদা চিনির GI প্রায় ৬৫-৭০, নারিকেল চিনির GI প্রায় ৩৫। অর্থাৎ, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো।
নারকেল চিনির একটি অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধ রয়েছে। নারিকেল চিনি ছোট কৃষকদের দ্বারা জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং প্রাকৃতিক উৎপাদন পদ্ধতির কারণে এটি সাধারণ চিনির বিকল্প হতে পারে। নারকেল চিনির মিষ্টতা সাধারণ চিনি এর সমতুল্য, তাই এটি মিষ্টান্ন, পানীয়, পেস্ট্রি এবং অন্যান্য খাবারে সুইটেনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাভা, ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণতম দ্বীপ, বহু বছর ধরে নারকেল চিনি উৎপাদন করে আসছে। নারকেল চিনি উৎপাদনের নির্দিষ্ট সময়কাল জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, এটির শুরু ১৭শ শতক থেকে। ১৬৫৭ সালে মাতারামের রাজা আমাংকুরাত এটি ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু করেন। ডাচ উপনিবেশিক আমলে নারকেল চিনি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে ওঠে। জাভার কৃষকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে আসছে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ০২:১০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
৪৮ বার পড়া হয়েছে

নারকেল গাছের রস থেকে হবে কোকোনাট সুগার বা নারকেল চিনি

আপডেট সময় ০২:১০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াতে নারিকেল চিনি (কোকোনাট পাম সুগার) একটি জনপ্রিয় মিষ্টিকারক উপাদান। এই অঞ্চলের অনেক জায়গায় নারকেল গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। সেখানকার মানুষরা ঐতিহ্যগতভাবে নারকেল গাছের রস (Coco sap) থেকে কোকোনাট সুগার তৈরি করে থাকে।
নারিকেল গাছ প্রতি মাসে ফুল উৎপন্ন করে। শ্রমিকরা গাছে উঠে অপরিণত ফুল কেটে দেয় এবং সেই স্থান থেকে বের হওয়া রস বাঁশ বা প্লাস্টিকের পাত্রে ৮-১২ ঘণ্টা ধরে সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রায় ১.৫ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রসকে উত্তাপে শুকানো হয়। ফলাফল হিসেবে এক ধরনের বাদামি দানাদার চিনি পাওয়া যায়, যা দেখতে অনেকটা কাঁচা আখের চিনির মতো।
১০০ গ্রাম কাঁচা নারিকেল রসে প্রায় ১৫ গ্রাম চিনি থাকে। নারিকেল গাছ অল্প বয়সেই রস সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে এবং এটি ২০ বছর পর্যন্ত এই কাজে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে, কোকোনাট সুগার পশ্চিমা দেশগুলিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ চিনি কোনো পুষ্টিগুণ রাখে না, শুধু খালি ক্যালোরি সরবরাহ করে। কিন্তু কোকোনাট সুগার কিছু পরিমাণ পুষ্টি উপাদান ধরে রাখে, যেমন: আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। কোকোনাট সুগারে কিছুটা খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তবে এটি এত বেশি নয় যে বড় কোনো উপকার পাওয়া যাবে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) হলো এক ধরনের স্কেল যা পরিমাপ করে কোনো খাবার কত দ্রুত রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করে। সাদা চিনির GI প্রায় ৬৫-৭০, নারিকেল চিনির GI প্রায় ৩৫। অর্থাৎ, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো।
নারকেল চিনির একটি অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধ রয়েছে। নারিকেল চিনি ছোট কৃষকদের দ্বারা জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং প্রাকৃতিক উৎপাদন পদ্ধতির কারণে এটি সাধারণ চিনির বিকল্প হতে পারে। নারকেল চিনির মিষ্টতা সাধারণ চিনি এর সমতুল্য, তাই এটি মিষ্টান্ন, পানীয়, পেস্ট্রি এবং অন্যান্য খাবারে সুইটেনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাভা, ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণতম দ্বীপ, বহু বছর ধরে নারকেল চিনি উৎপাদন করে আসছে। নারকেল চিনি উৎপাদনের নির্দিষ্ট সময়কাল জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, এটির শুরু ১৭শ শতক থেকে। ১৬৫৭ সালে মাতারামের রাজা আমাংকুরাত এটি ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু করেন। ডাচ উপনিবেশিক আমলে নারকেল চিনি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে ওঠে। জাভার কৃষকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে আসছে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
–  Muhammad Rahat